ইসলামপুরকে জেলা করার প্রাসঙ্গিকতা

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

2

~পাশারুল আলম

সমস্ত ট্রান্সফারড এরিয়াকে নিয়ে একটি স্বতন্ত্র জেলা করার দাবি দীর্ঘদিনের। স্থানীয় একটি গণসংগঠন ১৯৯৫ সাল থেকে এই দাবি জানিয়ে আসছে। এই দাবি আজ সমস্ত সাধারণ মানুষের ও বিভিন্ন গণসংগঠনের। কি যৌক্তিকতা আছে এই দাবির পেছনে? সরকার যখন একের পর জেলা ভাগ এক ভাগ করে প্রশাসনিক ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ করে চলেছে, তখন এই দাবি আরও জোরদার হচ্ছে। এই দাবির স্বপক্ষে যে সমস্ত কারণ বেশী করে দেখা হয় তাহল, এই এলাকা ১৯৫৬ সালে বিহার থেকে পশ্চিমবঙ্গের সাথে যুক্ত হয়েছে। এই যুক্ত হওয়ার সাথে বেশ কিছু প্রতিশ্রুতি রয়েছে। আবার এই জেলার সদর প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে ১৬৫ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত। এছাড়া রয়েছে রাজনৈতিক শোষণ ও বঞ্চনা। প্রশাসনিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার মানুষ। এই রকম নানা যুক্তি উপস্থিত করে এই আন্দোলন এখন সর্বসাধারণের আন্দোলনের রূপ নিতে চলেছে।
১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় দু’টি রাজ্য খণ্ডিত হয়, এক পাঞ্জাব প্রদেশ ও বাংলা প্রদেশ। বাংলা ভাগ হওয়ার পর যে দু’টি ভাগ হয় তাতে পূর্ব অংশ পর্ব পাকিস্থান, বর্তমানে বাংলদেশ। অন্যদিকে ভারত স্থিত বাংলা পশ্চিমবঙ্গ নামে স্বাধীন ভারতে থাকে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ দু-খণ্ডিত হয়। একদিকে সমগ্র দক্ষিণবঙ্গ ও উত্তরবঙ্গের মালদহ, বিভক্ত দিনাজপুর জেলার ভারতীয় অংশ, অন্যদিকে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি ও দার্জিলিং জেলা পরে। এই রকম সমস্যা ছাড়াও একাধিক সমস্যা সমাধান কল্পে কেন্দ্র সরকার গঠন করে রাজ্য পুনঃগঠন কমিশন (State Re-organisation Commission-1955) এই কমিশনকে দেশবাসী S.R.C. কমিশন নামে জানে। এই কমিশনের সুপারিশক্রমে ১৯৫৬ সালের ১লা নভেম্বর বিহার থেকে ৭৫৯ বর্গমাইল এলাকা পশ্চিমবঙ্গের সাথে যুক্ত হয়। ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় যখন বাংলা ভাগ হয়, তখন সমগ্র দক্ষিণবঙ্গ সহ মালদহ ও পশ্চিম দিনাজপুর জেলা একদিকে আর অন্যদিকে পরে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, ও ১৯৫০ সালে পশ্চিমবঙ্গের আগত কোচবিহার জেলা। ফলে বাংলা খণ্ডিত হয়ে যায়। এই খণ্ডিত বাংলাকে এক করার জন্য বর্তমান সমস্ত ইসলামপুর মহকুমা ও দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদাওয়া থানার ১৯টি মৌজা বিহার থেকে পশ্চিমবঙ্গে যুক্ত করা হয়। সেই সময় লক্ষ লক্ষ মানুষ বিহার থেকে পশ্চিমবঙ্গে সঙ্গে যুক্ত না হওয়ার জন্য প্রতিবাদ ও আন্দোলন করে। তারা বেশ কিছু আশংকার কথা বলে। সেই আশংকার কথা যথাযথ মনে করে কমিশন বেশ কিছু সুপারিশ করে। যা কমিশনের ৬৫৩ প্যারায় ১৭৭ নম্বর পাতায় স্থান পায়। তাতে বলা হয়-”While making this recommendation we have to take note of the fact the eastern portion of Kishanganj sub-division is predominantly inhabited by Muslim who would view with concern the transfer of this area to West Bengal on the ground that their linguistic and cultural rights might suffer and that the posible resettement of displasced persons from East Bengal might dislocate their life. These fears are not without justification. It would, therefore, be necessary for the Weat Bengal Government to take effective steps such as the recognition of the special porition of Urdu in this area for educational and official purposes. The density of population in this area is such that there is little scope for any resettlement of displased persons. The West Bengal Government would, therefore, do well to make a clear announment to the effect that no such resettlement would be undertaken. This would go to A long way in our opinion in dispelling doubts and fears” (S.R.C. page 177)এই আশঙ্কা যে মিথ্যা ছিলনা, তা আজ এখানকার মানুষ হারে হারে টের পাচ্ছে। এ বিষয়ে লক্ষ করলে দেখা যাবে, পশ্চিমবঙ্গের সাথে যুক্ত হওয়ার পর প্রথম যে আঘাত এল তা হলো ১৯৫৬ সালে আগত নতুন এলাকায় ১৯৫৫ সালের ভূমি সংস্কার আইন প্রয়োগ। এই আইন বলে ১৯৫৫ সালকে মানদন্ড ধরে অর্থাৎ বিহারে থাকাকালীন মানুষেরা যে জমি জায়গা বিক্রি করেছিলেন, বাংলায় গেলে কি হবে এই ভয়ে প্রচুর জমি বন্টন করে ছিলেন তার হিসেব ধরে প্রচুর পরিমানে জমি খাস বা ভেষ্ট করা হল। এতে জোতদার, জমিদার সাথে সাথে সাধারণ কৃষকও ভূমিহীন হয়ে পড়ল। তবে সেই সময় সরকারের কথা ছিলো খাস করা জমি এখানকার ভূমিহীনদের মধ্যে বিলিবণ্টন করা হবে। মানুষ ভাবল, আমরাই তো এই খাস জমি পাব এবং চাষ করব। খাস করা জমির কিছু অংশ গরীব মানুষকে পাট্টা দেওয়া হল আর বাকি জমি স্থানীয় মানুষ চাষ-আবাদ করে খাচ্ছিলেন। এদিকে ১৯৯০ সাল থেকে সমস্ত ট্রান্সফারড এরিয়ায় চা-বাগান গড়ে তোলার জন্য পুঁজিপতিরা জমি সংগ্রহ করতে লাগল। মানুষ জমি হাত ছাড়া না করার জন্য আন্দোলন শুরু করল। জমি বাঁচানোর জন্য টাসো নামে একটি সংগঠন সহ একাধিক গণসংগঠন আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ল। পুঁজিপতিরা বেশ কিছু রাজনৈতিক নেতা, মাফিয়া, দালাল চক্র ও পুলিশ প্রশাসনকে হাত করে গণ-আন্দোলনকারীদের উপর মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করতে লাগল। শ’য়ে শ’য়ে মানুষ জেল হাজতে গেলেন। সেই সময় প্রচার মাধ্যম আজকের মত সক্রিয় ছিলনা। এছাড়া ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ব্যাপকতা না থাকায় সেই ইতিহাস অনেকের অজানা থেকে গেল। বাহুবলে আর অর্থবলে পুঁজিপতিরা কৃষিজমি, বর্গা জমি, পাট্টা জমি, খাস জমি, খতিয়ানভুক্ত জমি, তিস্তার কমান্ড এরিয়ার জমি সর্বত্র তাদের থাবা বসিয়ে অবাধে চা-বাগান গড়ে তুলল। এই করে সমস্ত ট্রান্সফারড এরিয়ায় ছোট বড় প্রায় তিন হাজার চ-বাগান গড়ে উঠল। তিস্তা প্রকল্প যা কৃষির জন্য বাস্তবায়িত করা হয়েছিল তা মূল্যহীন হয়ে পড়ল। এতে প্রায় চল্লিশ হাজার হেক্টর জমি সাধারণ কৃষকের হাত থেকে পুঁজিপতিদের হাতে চলে গেল।
দ্বিতীয়ত:-১৯৫৬ সালে এই এলাকা পশ্চিমবঙ্গের সাথে যুক্ত হয় এবং ২৫শে অক্টোবর নোটিফিকেশন জারি হয়। যার নোটিফিকেশন নং-এস.আর.ও.২৪৭৩ এবং তা ১লা নভেম্বর থেকে কার্যকরী হয়। প্রথম দিন এই ট্রান্সফারড এরিয়াকে দার্জিলিং জেলার সাথে যুক্ত করা হয়। তার পরের দিন এক সরকারী বিজ্ঞপ্তি জারি করে দার্জিলিং জেলা থেকে সরিয়ে সাবেক পশ্চিম দিনাজপুর জেলার সাথে যুক্ত করা হয়। যার সরকারী জি.এ.-৩৮৭৫ তারিখ- ০২/১১/১৯৫৬; এর পর ১৯৫৯ সালের ২০শে মার্চ ১১৭৭ নম্বর জি. এ. দ্বারা মহানন্দা নদীর উত্তরাংশে মোট ১৯টি মৌজার ৫৬.৯৬ বর্গমাইল এলাকা দার্জিলিং জেলার সাথে যুক্ত করা হয়। অবশেষে ১৯৯২ সালের ১লা এপ্রিল সাবেক পশ্চিম দিনাজপুর জেলা বিভাজন করে বর্তমান ইসলামপুর মহকুমাকে উত্তর দিনাজপুর জেলার মধ্যে দেওয়া হয়। এর ফলে যে সমস্ত জন সাধারণ বিহার থেকে একই ভাষাভাষী একই সংস্কৃতির মানুষ বিহার থেকে ট্রান্সফারড হয়ে বাংলায় এসে ছিলেন তারা দুই জেলায় বিভক্ত হয়ে পরে। একটি অংশ সাবেক পশ্চিম দিনাজপুর জেলার আর একটি অংশ দার্জিলিং জেলায়। এতে এখানকার মানুষের সংস্কৃতি আরও সংকটে পরে। এই সংকট মোচন করতে গেলে সমস্ত ট্রান্সফারড এরিয়াকে নিয়ে একটি স্বতন্ত্র জেলা ঘোষণা করলে নূন্যতম স্বায়ত্ব শাসন আসতে পারে। যাতে করে এই এলাকার মানুষের ভাষা ও সংস্কৃতি বাঁচতে পারে।
তৃতীয়ত :-ট্রান্সফারড এরিয়ার উন্নয়নের দায়িত্ব সেদিন কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার নিয়েছিলেন। এখানকার ভাষা ও সংস্কৃতি, এখানকার মানুষেরা কৃষ্টি-কালচার রক্ষা করাতো দুর অন্ত পরোক্ষে পূর্বতন ও বর্তমান সরকার নানাভাবে এই এলাকাকে শোষণের ক্ষেত্রভূমি বানিয়ে রেখেছে। এখানকার মানুষ ১৯৮৫ সাল থেকে সরকার প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পালন করার জন্য আবেদন করে আসছে। সংবিধান সম্মত একটি স্বতন্ত্র জেলা ও স্বতন্ত্র সংসদ ঘোষণার জন্য কেন্দ্রের কাছে ও রাজ্যের কাছে দাবি জানিয়ে আসছে। মানুষ মনে করে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই এলাকা বিষয়ে যে দায়বদ্ধতা আছে তা পালন করতে চাইলে, রাজ্যের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে এই এলাকাকে একটি স্বতন্ত্র জেলা দিতে পারে। এই স্বতন্ত্র জেলা এখানকার মানুষেরা কিছুটা হলেও একটি রক্ষাকবচ হতে পারে। সমস্ত ট্রান্সফারড এরিয়াকে নিয়ে একটি স্বতন্ত্র জেলা তৈরী করার জন্য ১৯৯০ সালে দার্জিলিং এর সংসদ মাননীয়া ইন্দ্রজিৎ খুল্লার মহাশয়কে দিয়ে পার্লামেন্টে এই দাবি তোলাও হয়। যার Question No-4934 Dated-06.09.1990 এই প্রশ্নের উত্তরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী D.O.No-S.16012/21/90.SR পত্রে উত্তর দেন। সেখানে তিনি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসুর চিঠির প্রক্ষিতে প্রদত্ত প্রশ্নের উত্তরের বলেন, পরবর্তীতে ইসলামপুরকে একটি জেলা করা হবে। তারপর গঙ্গা দিয়ে বহু জল বয়ে যায়। বহু নতুন নতুন জেলা ঘোষিত হয়েছে কিন্তু ইসলামপুর জেলা হয়নি । ইসলামপুরকে নিয়ে ভাবার সময় হয়নি।একই ভাবে আমরা দেখি ১৯৫৯ সালের ২১শে মার্চ প্রয়াত ড . বিধান চন্দ্র রায় যেদিন ইসলামপুরকে মহকুমা শহর হিসাবে ঘোষণা করেন, সেদিন তিনি তার ভাষণে বলেন পরিকাঠামো তৈরী হলে সমস্ত ট্রান্সফারড এরিয়াকে নিয়ে ইসলামপুরকে সদর করে নতুন জেলা ঘোষণা করা হবে। আজ অবধি হয়তো সেই পরিকাঠামো তৈরী হয়নি। তাই ড.বিধান চন্দ্র রায়ের স্বপ্ন পূরণ করা যায়নি। ইসলামপুর জেলা করার বিষয়ে ১৯৯২ সালে মার্চ মাসে কলকাতা উচ্চ আদালতে একটি মামলা করা হয়। সেই মামলার শুনানি হয় ৩১শে মার্চ। মহামান্য আদালত ইসলামপুর কে জেলা করার দাবিকে ন্যায় সংগত বলেন কিন্তু সেদিন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পক্ষ থেকে জাননো হয় যে, রায়গঞ্জকে সদর করে জেলা ঘোষণা হয়ে গেছে নতুন জেলা শাসক নিয়োগ হয়ে গেছেন এবং তিনি জয়েন্ট করেছেন। এই রকম পরিস্থিতিতে নোটিফিকেশন বদল করা সম্ভব নয়। এই কথার পর সেদিন ইসলামপুরকে জেলা করা সম্ভব হয়নি।
চতুর্থতঃ- এই একাকার মানুষেরা জীবন ও জীবিকার ক্ষেত্রে সংরক্ষণ দিতে হলে ভারতীয় সংবিধানের ২৪৪(ক) ধারা অনুযায়ী এই এলাকায় স্বায়ত্ব শাসন দেওয়া উচিত ছিলো। কেননা, একটি নিদিষ্ট জনগোষ্ঠী যারা নিজেদের সূর্য্যাপুরী বলে পরিচয় দেন এবং একটি নিদিষ্ট ভাষায় কথা বলেন। এই স্বায়ত্ব শাসন যা সংবিধানের ২৪৪(ক) ধারায় বিদ্যমান তা যে কোনো রাজ্য সরকার কেন্দ্রের অনুমতি নিয়ে দিতে পারে। যদিও এই ধারায় কিছু শর্ত রয়েছে তাকে উত্তীর্ণ করার মতো ঐতিহাসিক উপাদান এখানকার জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছিলো। । তাতো হয়নি বরং একটি রাজ্যের মানচিত্রকে যে এলাকা অখণ্ডরূপ দিলো তাকে জেলা ঘোষণা না করা সরকারের উচিত হয়নি বলে বহু মানুষ মনে করে। যেখানে সমস্ত ভারতবর্ষের মধ্যে পাঞ্জাব ও পশ্চিমবঙ্গের ১৮৩৬ সালের আইন অনুযায়ী এই অধিকার রয়েছে যে এই দুই রাজ্য নতুন জেলা ঘোষণা করলে কেন্দ্র সরকারের অনুমোদন লাগেনা। ভারতীয় সংবিধাননে মধ্যে থেকে একটি এলাকার নিজস্ব সংস্কৃতি ও নূন্যতম সমস্যা সমাধান একটি জেলার মাধ্যমে করা যায়। তা দিয়ে কিছুটা হলেও এখানকার মানুষের যন্ত্রণার উপসম হত।
পঞ্চমত:- যে সমস্ত প্রেক্ষাপটে এই দাবি আজ সমস্ত ট্রান্সফারড এরিয়ার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে তার কয়েকটি দিকের প্রতি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরা হল। যা হল সদর শহর থেকে শেষ গ্রামের দুরুত্ব ১৬৫ কিলোমিটার, এই জেলা এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত প্রায় ২২০ কিলোমিটার; ইসলামপুর স্বতন্ত্র জেলা করার বিষয়ে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ; প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে দুই মহকুমার বেকার যুবক যুবতীদের শতাংশের হিসাবে বিস্তর ফারাক অথচ রায়গঞ্জ অপেক্ষা ইসলামপুর আয়তনে ও জনসংখ্যায় অধিক।; সমস্ত ট্রান্সফারড এরিয়ার ভোটার সংখ্যা প্রায় ১৫ লক্ষ। শুধু ইসলামপুর মহকুমার ভোটার সংখ্যা ১১৫৪১১৩ জন। চলমান বছরে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে; ইসলামপুর সদর শহর না হওয়ার কারণে আলুয়াবাড়ি রোড স্টেশনে কোন দুর পাল্লার ট্রেন দাঁড়ায় না; শিক্ষার জগতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বৈষম্য দুর হবে; ইসলামপুর জেলা হলে নব নির্মিত জেলা পরিষদ স্থানীয় ভাবে উন্নয়ন করতে পারবে; সর্বপরি ছোট বড় সব কাজে রায়গঞ্জ যাওয়ার ধকল থেকে মুক্ত হওয়া যাবে। এই রকম কারণ খুঁজলে হাজার পেরিয়ে যাবে।
পরিশেষে বলা যায়, ইসলামপুরকে সদর করে সমস্ত ট্রান্সফারড এরিয়াকে নিয়ে একটি স্বতন্ত্র জেলা ও একটি স্বতন্ত্র সংসদ্ ক্ষেত্র ঘোষণা করার দাবি দীর্ঘ দিনের । এই নিয়ে একটি সংগঠন 1995 সাল থেকে দাবি জানিয়ে আসছে । কিন্তু এই দাবি এত দিনের পুরনো হওয়া সত্বেও কেন আজ অবধি পূরণ হলনা ? এই দাবি পুরনো, বহু পুরনো, কিন্তু যারা এই দাবি করে আসছে । তারা কোনো দিন রাজনৈতিক ক্ষমতায় আসেননি । আর যে সমস্ত দল বা যে সমস্ত ব্যক্তি ক্ষমতায় এসেছিলেন বা আছেন তারা কোনোদিন বিধানসভায় ইসলামপুরকে জেলা করার দাবি তুলেন না । এই দাবি যে জনগণের দাবি তা কেউ বলেননি । ব্যতিক্রম বর্তমানে চাকুলিয়ার বিধায়ক আলি ইমরান রমজ। তিনি একাধিক বার এই দাবি তুলেছেন। অন্য দিকে ট্রান্সফারড এরিয়া সূর্য্যাপুর অর্গ্যানাইজেসন বা টাসো এই দাবি 1995 সাল থেকে করে আসছে। এই সংগঠন বারবার জেলার প্রাসঙ্গিকতা বিষয়ে বলে, কিন্তু এই সংগঠন ক্ষমতার বাইরে থেকে লড়াই করে । অন্য দিকে প্রভাবশালী ব্যক্তিরাও এ বিষয়ে নিরব থেকেছেন । তবে আশার আলো ইদানীং বহু মানুষ এই দাবির পক্ষে সওয়াল করতে শুরু করেছেন । বিশেষ করে যুব সমাজ এই দাবিকে সঠিক মনে করে ও আন্দোলনে সামিল হতে ইচ্ছুক । মহকুমার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজারো মানুষ সওয়াল করতে শুরু করেছেন । এই পরিস্থিতিতে জনগণের সাথে সংযোগ গড়ে তোলা জরুরি । কিন্তু নেতৃত্ব দেওয়ার মানুষ কম। প্রবল জন সর্মথন থেকে জন প্রতিনিধিদের দাবি তুলতে বাধ্য করানোর যে উপায়, তা সম্ভব হচ্ছে না । এখানকার সবাই চায় ইসলামপুর জেলা হোক কিন্তু কবে হবে সেই আশায় বুক বেঁধে আছে লক্ষ লক্ষ মানুষ।

 

মতামত লেখকের নিজস্ব।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর