সাবধান! অ্যান্টিবায়োটিক নিজে থেকে খেয়ে বিপদ ডেকে আনতে পারেন, তাই ডাক্তারবাবুর পরামর্শ নিয়ে খান

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG-20200617-WA0006

এনবিটিভি ডেস্ক: আলোচনা করেছেন ডক্টর শেখ শাহাদাত হোসেন, এলাহাবাদ সেন্ট্রাল রেলওয়ে হসপিটাল হেডকোয়ার্টার (N.C.RLY), রেসিডেন্সি মেডিক্যাল অফিসার

ভারতে দিন দিন বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুর হারও। অন্যদিকে কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসায় কাজ করবে এ রকম শতভাগ নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ পৃথিবীতে এখনো আসেনি। তবে কোভিডের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে গবেষণা চলছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে। যেহেতু এই রোগের কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই, সেহেতু আমাদের দেশসহ বিভিন্ন দেশে অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। যেমন হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন একটি বহুল প্রচারিত ও ব্যবহৃত ওষুধ। যদিও এর কার্যকারিতার সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। বরং সম্প্রতি চিকিৎসা বিষয়ক জার্নাল ল্যানসেটসহ বিভিন্ন গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, ক্লোরোকুইন ব্যবহারকারীদের মধ্যে মৃত্যুর হার তুলনামূলক বেশি। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তা ট্রায়াল থেকে বাদ দিয়েছিল। কিন্তু বিতর্ক শুরু হওয়ায় চার-পাঁচ দিন পর আবার ট্রায়াল শুরু করেছে। ওদিকে ফ্রান্স এই ওষুধ বন্ধ করে দিয়েছে।

আরেকটি ওষুধ আইভারমেকটিন। এই ওষুধ মানুষের ভেতর কতটুকু কাজ করবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। অস্ট্রেলিয়ার একটি ল্যাবরেটরিতে এটা নিয়ে গবেষণা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এই ওষুধ ভাইরাসের লোড কমায়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে যে ডোজের কথা বলা হয়েছে, তা অনেক উচ্চমাত্রার। অথচ আমরা দিচ্ছি মাত্র দুই থেকে তিনটি ট্যাবলেট। তাই এটা মানবদেহে সুনির্দিষ্টভাবে কাজ করবে তা এখনো আমরা বলতে পারছি না, বলার মতো কোনো গবেষণাও নেই। তবে জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়সহ এখন ভারতেও এ নিয়ে গবেষণা হচ্ছে।

আর ইনজেক্টেবল কিছু ওষুধ, যেগুলো হাসপাতালে দেওয়া হয়, যেমন—রেমডেসিভির; কয়েক দিন আগে এটা বাজারজাত শুরু হয়েছে। গবেষণায় জানা গেছে, এই রেমডেসিভির যে মৃত্যুর হার খুব কমায়, তা কিন্তু নয়। এটা আবার সব রোগীকেও দেওয়া হয় না। যারা একটু সিভিয়ার বা জটিল হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, তাদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। হয়তো বা এই ওষুধ প্রয়োগের পর হাসপাতালে থাকার সময়টা একটু কমে আসে। যেখানে লাগত ১৪ দিন, সেখানে লাগছে হয়তো ১১ দিন। যে ওষুধগুলো প্রয়োগ করা হচ্ছে, সেগুলো হচ্ছে পরীক্ষামূলকভাবে। বরং কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওষুধগুলো ক্ষতি করেছে বেশি।

তিনটি পদ্ধতি কার্যকর

কোভিডের চিকিৎসাক্ষেত্রে তিনটি বিষয় আমাদের মনে রাখা দরকার। প্রথমত, কভিড আক্রান্ত ৮০ শতাংশ বা তার বেশি ক্ষেত্রে রোগীদের কোনো ওষুধই লাগে না। দ্বিতীয়ত, ওষুধের বাইরে এই রোগের প্রধান চিকিৎসা হলো অক্সিজেন প্রয়োগ করা। মডারেট বা সিভিয়ার অথবা ক্রিটিক্যাল ক্ষেত্রে এটা খুব জরুরি।

তৃতীয়ত, কোভিড আক্রান্তদের অনেকের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় রক্ত জমাট বেঁধে যাচ্ছে। তখন রোগী দ্রুত খারাপ হয়ে যায়। রক্ত পাতলা করার জন্য কিছু ওষুধ, যেমন—অ্যানোক্সপিরিন বা হেপারিন টাইপের কিছু ওষুধ বেশ কাজ করে। তাই বলতে হবে, এসব চিকিৎসা বা ব্যবস্থাই কোভিড রোগীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। তবে করোনাভাইরাস ঠেকানোর জন্য স্পেসিফিক কোনো ওষুধ আছে—এটা নির্দ্বিধায় বলার মতো পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি।

হরহামেশা ওষুধ নয়

আমেরিকায় এফডিএর অনুমতি ছাড়া কোনো ওষুধ ব্যবহার করা যায় না। আর আমাদের দেশে পত্রপত্রিকায় লেখা দেখে, সোশ্যাল মিডিয়ায় তথ্য প্রচার দেখে ঘরে ঘরে ওষুধ কেনার হিড়িক পড়ে গেছে। এই প্রবণতা কিন্তু খুবই বিপজ্জনক। আমাদের কাছেও এ রকম ওষুধের লিস্ট পাঠাচ্ছে অনেকে যে এই ওষুধগুলো খাবে কি না।

দেখা যাচ্ছে, আইভারমেকটিন, এজিথ্রোমাইসিন, ডক্সিসাইক্লিন, জিংক, ভিটামিন প্রয়োগ হচ্ছে। এই যে অ্যান্টিবায়োটিকগুলো হরহামেশা খাওয়া হচ্ছে, পরবর্তী সময়ে কিন্তু তাদের ওই অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স হতে পারে। অর্থাৎ তখন আর ওই ওষুধ কাজ করবে না। জিংক, এজিথ্রোমাইসিন, ডক্সিসাইক্লিন—এগুলো আসলে কোনোটাই স্পেসিফিক ওষুধ নয়। এগুলো খেলে ক্ষতিটা হবে, কিন্তু অন্য দিক দিয়ে; যেমন—এজিথ্রোমাইসিন একটা ভালো অ্যান্টিবায়োটিক। কিন্তু এটার অপপ্রয়োগ হলে পরবর্তী সময়ে এই ওষুধ আর কাজ করে না। তখন ওষুধগুলো রেজিস্ট্যান্ট হয়ে যায়। এজিথ্রোমাইসিনে অনেক সময় সাইড ইফেক্টও হয়। তাই যেখানে উপকারের সম্ভাবনা নেই, সেই ওষুধগুলো অযথা কিনে রেখে লাভ কী? সোশ্যাল মিডিয়ায় এসব প্রেসক্রিপশন শেয়ার করা খুব ভয়ংকর।

করণীয়

সাপোর্টিভ চিকিৎসা, আরেকটা ইনফেকশন কন্ট্রোল—এই দুটি হলো কভিড শনাক্ত হলে ওই ব্যক্তির জন্য জরুরি বিষয়। জ্বর যদি থাকে তাহলে প্যারাসিটামল, সর্দি-কাশি থাকলে অ্যান্টিহিস্টামিন খাবে। অন্য কোনো জটিল রোগ বা তীব্র কাশি, তীব্র জ্বর হলে, শ্বাসকষ্ট হলে, দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। তাত্ক্ষণিকভাবে শুধু অক্সিজেন সাপ্লাই দিলেও কিন্তু অনেক রোগী ভালো হয়ে যায়। এর পাশাপাশি সাপোর্টিভ চিকিৎসা দেওয়া হয়।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর