Thursday, June 12, 2025
28 C
Kolkata

অস্তিত্বের সংকটে কারা- হিন্দু না মুসলমান?

~সানাউল্লাহ খাঁন

বিগত ৮ বছর ধরে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে চলেছি ।
ইতিহাসের বিকৃতি, রাস্তা থেকে শুরু করে স্টেশন-স্টেডিয়াম- শহর-জেলার নাম পরিবর্তন দেখে তাজ্জব হতে হয়। ইতিহাসের বিকৃতি সাধন করলে কি ইতিহাস মুছে ফেলা যায়? মুছে ফেলা যায় কি একটি জাতির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি?
ইতিহাস শিক্ষা নেওয়ার জন্য অতীতের ভুল শুধরে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য। তা না করে অতীতের ভুলগুলিকে পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করা হয়- ইতিহাস নিজেই তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য জন্য নিজেকে পুনরাবৃত্তি করে।

গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি- রাজনৈতিক সংগঠনগুলি ইতিহাস গড়তে যতটা না তৎপর তারচেয়ে অনেকগুন বেশি তৎপর ইতিহাস ধ্বংস করার জন্য। ভাঙা-গড়ার নিয়মে যে জাতি বা দল ভাঙে বেশি তাদের পতন অনিবার্য, আবার যারা গড়ে বেশি ভাঙে কম তাদের রাজত্ব দীর্ঘস্থায়ী হয়। এ নিয়ম কোন যুগেই পরিবর্তন হয়নি এবং পৃথিবীর ধ্বংসের পূর্ব মূহুর্ত পর্যন্ত এই নিয়ম জারি থাকবে, ইতিহাস তার সাক্ষ্য।

বৌদ্ধযুগকে ধ্বংস করে তার উপর বৈদিক বর্ণবাদী যুগ তৈরির চেষ্টা একাধিকবার হয়েছে এদেশে কিন্তু কখনোই তা স্থায়ী রুপ ধারণ করতে পারেনি, উল্টে এই ধ্বংসাত্মক কাজের জন্য চরম পরিণতি ভোগ করতে হয়েছে। ৭০০ বছর মুসলমানদের দ্বারা শাসিত হতে হয়েছে, পরবর্তীতে প্রায় ২০০ বছর ব্রিটিশদের হাতে শাসিত হতে হয়েছে।

হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের নামে হিন্দুদের মধ্যে মুসলিম আতংক বা ইসলামফোবিয়া সৃষ্টি করার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য কি? প্রচার করা হচ্ছে অখন্ড ভারত গড়তে হবে কার্যতঃ অখন্ড ভারত গড়া তো দুরের কথা ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে- এক দেশ, এক জাতি, এক আইন, এক পতাকার নামে বিভিন্ন জাতিসত্তাকে অস্বীকার করে ভারতের বহুত্ববাদী মৌলিক চরিত্রকে ধ্বংস করার চেষ্টা চলছে।

১৪% মুসলমানদের টাইট করার ধুয়া তুলে ৭৫% হিন্দু তথা অমুসলিমদের উপর উচ্চমূল্য বৃদ্ধি, বেকারত্বের স্টীম রোলার চালানো হচ্ছে। মুসলমানদের হিন্দুরাষ্ট্রের জুজু দেখানো হচ্ছে- এটুকু নাহয় মেনে নেওয়া যায় কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের সংখ্যালঘু মুসলমান জুজু দেখানো হবে এটা কোন যুক্তিতে মেনে নেওয়া হচ্ছে?
১৪ শতাংশ সংখ্যালঘুর ভয়ে ভীত ৭৫ শতাংশ সংখ্যাগুরু, এটা লজ্জা না গৌরবের বিষয়?

আসলে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে যারা বসে আছে- সেই বর্ণবাদী ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রীয় রা প্রকৃত অর্থে সংখ্যালঘু, সর্বসাকুল্যে ১০ শতাংশের অধিক হবে বলে মনে হয়না, অথচ ক্ষমতার সিংহভাগ ওরাই দখল করে আছে। আর এ ব্যাপারে ওরা ভীষন ভীষন রকম সচেতন- ওরা জানে আজ নাহয় কাল তাদের এই চালাকি ধরা পড়া যাবে।

হিন্দু জাতিয়তাবাদী কংগ্রেসের এই চালাকি ধরে ফেলেছিলেন জিন্নাহ ও আম্বেদকরজী। জিন্নাহ ভাগের ভাগ পেয়ে সন্তুষ্ট হয়ে গেছলো কিন্তু আম্বেদকরজী সামলানোর জন্য সংবিধান প্রণয়নের দায়ীত্ব দিয়ে সন্তুষ্ট করা হলো, গাঁধী-নেহেরু জুটি বুঝে গিয়েছিলেন ভারতকে যদি হিন্দুরাষ্ট্র ঘোষনা করা হয় তাহলে সবার আগে ভিম রাও আম্বেদকর বিদ্রোহ ঘোষনা করে ওদের ক্ষমতার কেন্দ্রে পৌছানোর পথে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। প্রায় ৫০ শতাংশ দলিত হিন্দু বর্ণ হিন্দুদের শত্রু হয়ে যাবে। তাছাড়া যেটা সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল- তাহল স্বাধীন ভারতের সংবিধান কি রকম হবে, সমস্ত জাতি জনজাতির স্বার্থ কিভাবে সুরক্ষিত থাকবে, ভারসাম্য বজায় রেখে সেই সংবিধান রচনার ক্ষমতা আম্বেদকরজীর চেয়ে অধিক যোগ্যতা সম্পন্ন কংগ্রেস তথা হিন্দু জাতিয়তাবাদী দের হাতে কেউ ই ছিল না। অর্থাৎ সাপও মরলো লাঠিও ভাঙলো না। ব্রাহ্মণ্যবাদের চরম শত্রু আম্বেদকরকে ঠান্ডা করা গেল এবং ক্ষমতাও হাসিল করা গেল।

এটা যতখানি সুখের হল ঠিক ততটাই দুঃখও ডেকে আনল- মুসলিম রাষ্ট্র পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতকে হিন্দুরাষ্ট্র করা হবে এটা ছিল আজকের বিজেপি জন্ম যাদের গর্ভ থেকে সেই ব্রিটিশদের চাটুকার RSS, হিন্দু মহাসভা, জনসংঙ্ঘের লালিত স্বপ্ন । তাদের সেই স্বপ্ন চুরমার হতে দেখে এতটাই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো যে, গাঁধী জি কে জীবন দিয়ে তা পরিশোধ করতে হয়।

ক্ষমতার কেন্দ্রে পৌছানোর পরও তাদের সেই ক্ষোভ স্তিমিত হয়নি। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে আজও একই রকম মরিয়া।
তাই তো কংগ্রেস মুক্ত ভারত গড়ার ডাক দিয়ে যে পথ চলা শুরু করেছিল এখন সেটা বিরোধী মুক্ত হিন্দুরাষ্ট্র গড়ার লক্ষ্যে পরিণত হয়েছে। আর এই লক্ষ পূরণ করতে হলে সবচেয়ে আগে দলিত হিন্দু দের দুর্বল করতে হবে, মুসলিম জুজু দেখিয়ে উস্কানী দিতে হবে, সেই কাজটী সুচারু রুপে সম্পন্ন করার জন্যই মুসলমান তথা ইসলামভীতি ছড়ানো হচ্ছে।

এই সহজ সরল সত্যটুকু যত তাড়াতাড়ি সংখ্যাগুরু হিন্দু সমাজ বুঝতে পারবে ততই মঙ্গল, তা নাহলে অধিকার পাওয়ার লক্ষ্য অর্জন করতে গিয়ে অধিকার হারিয়ে উচ্চবর্ণের গোলামী করার জন্য পুনরায় প্রস্তুত থাকতে হবে । সিদ্ধান্ত ৭৫ শতাংশের হাতে, তারা কি চায় তাদেরই নির্ণয় করতে হবে- স্বাধীনতা না গোলামী!

সেচ্ছায় আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় না মাথা উঁচু করে বাঁচার পথ, সেটাই দেখার আছে⁉️

(মতামত লেখকের নিজস্ব)

Hot this week

দিল্লির দ্বারকায় বহুতলে ভয়াবহ আগুন থেকে বাঁচতে ৯ তলা থেকে লাফ দিয়ে একই পরিবারের তিনজনের মর্মান্তিক মৃত্যু

নয়াদিল্লি: মঙ্গলবার সকালে দিল্লির দ্বারকা সেক্টর-১৩ এর শাপাথ সোসাইটিতে...

রাজস্থানের চুরুতে মহিলা কনস্টেবলের উপর ডিএসপি সুনীল ঝাঝড়িয়া হাত তোলার ভিডিও ভাইরাল, তদন্ত শুরু

রাজস্থানের চুরুতে একটি ভাইরাল ভিডিও ঘিরে বিতর্ক তুঙ্গে। ভিডিওতে...

Topics

Related Articles

Popular Categories