ফেসবুকে একমাত্র বিজেপি দলই পারবে হিংসা ও বিদ্বেষ ছড়াতে, চাঞ্চল্যকর দাবি ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG-20200817-WA0015

এনবিটিভি ডেস্ক: কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি রাহুল গান্ধি বলেছেন, ভারতে বিজেপি-আরএসএস ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপ নিয়ন্ত্রণ করছে। তারা এর মাধ্যমে ভুয়ো সংবাদ ও বিদ্বেষ ছড়ায় এবং এটি ভোটারদের প্রভাবিত করতে ব্যবহার করে। অবশেষে আমেরিকান গণমাধ্যমে ফেসবুক সম্পর্কে সত্য প্রকাশ পেয়েছে।

আজ রবিবার রাহুল গান্ধি বিদেশি সংবাদপত্রে ছাপা সাম্প্রতিক একটি খবরকে উদ্ধৃত করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইস্যুতে হিন্দুত্ববাদী বিজেপি-আরএসএস সম্পর্কে ওই মন্তব্য করেন। তিনি এ সংক্রান্ত একটি খবর টুইটারে শেয়ার করেছেন। রাহুল গান্ধি যে খবর শেয়ার করেছেন তাতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের নিয়ে বিজেপি’র ফায়ারব্র্যান্ড নেতা টি রাজা’র বিবৃতি উল্লেখ করা হয়েছে। বিজেপি নেতা টি রাজার বিবৃতি ফেসবুকের বিদ্বেষ বিধি লঙ্ঘন করলেও তিনি ফেসবুক ব্যবহার করতে সক্ষম হচ্ছেন।

কংগ্রেসের দাবী, ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপ সম্পর্কে ওঠা অভিযোগ ও প্রকাশ্যে আসা বিষয়টি যৌথ সংসদীয় কমিটি’র (জেপিসি) মাধ্যমে তদন্ত হোক। একইসঙ্গে বিজেপি’র সঙ্গে উভয় প্ল্যাটফর্মের কর্মীদের মধ্যে সম্পর্ক পরীক্ষা করতে হবে। ফেসবুকের সদর দফতরেরও এটি পরীক্ষা করে দেখুক বলে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মন্তব্য করা হয়েছে।
ভারতের মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) প্রধান ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ওই ইস্যুতে বলেছেন, বিভিন্ন গণতন্ত্রে ফেসবুকের ভিন্ন ভিন্ন মান কেন? এটি কী ধরণের নিরপেক্ষ প্ল্যাটফর্ম? ওই প্রতিবেদনটি বিজেপি’র জন্য ক্ষতিকারক। বিজেপি’র সম্পর্কে ফেসবুকের সম্পর্ক প্রকাশিত হয়ে গেছে এবং ফেসবুক কর্মচারীর উপরে বিজেপি’র নিয়ন্ত্রণের প্রকৃতিও প্রকাশ্যে এসেছে।

কংগ্রেসের মুখপাত্র রণদীপ সিং সূর্যেওয়ালা কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘ভক্ত টিভি চ্যানেল-প্রিন্ট মিডিয়ার পরে ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে মোদি সরকারের যোগসাজশ উন্মুক্ত হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন-ফেসবুক কী ‘ভুয়ো খবর’ ও বিদ্বেষপূর্ণ উপাদান ছড়াতে ব্যবহৃত হচ্ছে? ফেসবুক ইন্ডিয়ার প্রধানদের সঙ্গে বিজেপি’র কী সম্পর্ক রয়েছে? এই ষড়যন্ত্রের কী জেপিসি’র মাধ্যমে তদন্ত হওয়া উচিত?’

কংগ্রেসের সিনিয়র নেতা দিগ্বিজয় সিং ফেসবুক কর্তা মার্ক জুকারবার্গের সমালোচনা করে বলেছেন, মার্ক জুকারবার্গ দয়া করে এটি নিয়ে কথা বলুন। প্রধানমন্ত্রী মোদীর সমর্থক আঁখি দাসকে ফেসবুকে নিয়োগ করা হয়েছিল, যিনি সাগ্রহে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মুসলিমবিরোধী পোস্টগুলি অনুমোদন করেন। আপনি প্রমাণ করেছেন যে আপনি যা প্রচার করেন তা আপনি অনুসরণ করেন না।

গণমাধ্যমে প্রকাশ, ব্যবসায়িক মুনাফার কথা মাথায় রেখেই বিজেপি নেতার ঘৃণা ছড়ানোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। গত (শুক্রবার) প্রকাশিত ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এ বলা হয়েছে, বিজেপি নেতাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ভারতে ব্যবসার ক্ষতি হতে পারে, এই আশঙ্কা থেকেই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ফেসবুক। তেলেঙ্গানার বিজেপি নেতা ও বিধায়ক টি রাজা প্রকাশ্যে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষপূর্ণ মন্তব্য করেছিলেন।

তাঁর ওই বক্তব্য ফেসবুকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়লেও কোনও ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়নি। বিদেশি গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতে ফেসবুকের পাবলিক পলিসি বিষয়ক কর্মকর্তা আঁখি দাস মূলত পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিনি নাকি বলেছিলেন, কেন্দ্রীয় সরকারের শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে ‘বিদ্বেষ রোধ আইন’ প্রয়োগ করলে তা ভারতের বাজারে ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে সংস্থাকে। সে কারণেই কর্মীদের তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন, টি রাজার বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে না।

বিজেপি নেতা টি রাজার বক্তব্য হিংসা ও উসকানিতে ভরা সত্ত্বেও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি এবং এটা কেন্দ্রীয় সরকারের শাসকদলের হয়ে একধরনের পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ বলেও মার্কিন গণমাধ্যমে মন্তব্য করা হয়েছে।

ফেসবুকের মুখপাত্র অ্যান্ডি স্টেন ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’কে বলেছেন, হিংসায় উসকানিমূলক মন্তব্য বা বিদ্বেষ ছাড়ালে তা নিষিদ্ধ বলে গণ্য করে ফেসবুক। কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তি বা দলনিরপেক্ষ হয়েই ফেসবুক গোটা বিশ্বজুড়ে এই কাজ করে। তবে এই কাজে আরও নিবিড় করার অবকাশ রয়েছে। এবং তা করার ক্ষেত্রে ফেসবুক জোর দিয়েছে।

এ সম্পর্কে আজ পশ্চিমবঙ্গের ‘ভাষা ও চেতনা সমিতি’র সম্পাদক ও কোলকাতার প্রেসিডেন্সী কলেজের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমানুল হক বলেন, ‘ফেসবুক ক্রমশ একটি বিজেপি-আরএসএসের শাখা বা বর্ধিত শাখা রূপে নিজেদের পরিগণিত করতে চাচ্ছে। সাম্প্রতিককালে দেখা যাচ্ছে বিজেপি বা আরএসএস বিরোধী পোস্টগুলো অনুমোদিত হচ্ছে না। অথবা তাঁদের রিচ কমে যাচ্ছে। কিন্তু বিজেপি’র পক্ষের পোস্ট বা মুসলিম বিরোধী পোস্ট বা দলিত বিরোধী পোস্ট অবাধে প্রচার পাচ্ছে! অনেকেই অভিযোগ করছে যে আমাদের পোস্টগুলো দেখা যাচ্ছে না বা রিচ কমে যাচ্ছে। এই অভিযোগ প্রায়শই শোনা যাচ্ছে যে, বিভিন্নজনকে ব্লক করা হচ্ছে। আমাকেও একাধিকবার ব্লক করা হয়েছে। আজকে তো একেবারে বিষয়টি প্রকাশ্যে এসে গেছে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনের পরে।’

সৌজন্যে: পুবের কলম পত্রিকা

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর