তোষণ করা তো দূরের কথা, মুসলিম সম্প্রদায় পরিকল্পিত বঞ্চনার শিকার! অভিযোগ ড: নুরুল ইসলামের

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG-20200929-WA0030

এনবিটিভি ডেস্ক: মুসলিম তোষণ প্রসঙ্গে সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী মঞ্চের ‘মিথ্যার জবাবে’ পুস্তিকায় লেখা হয়েছে,’আসলে যারা এই অপপ্রচারটি চালিয়ে থাকে তারা কোন তথ্যের ধার ধারে না। যদি রাষ্ট্র কোনো বিশেষ সম্প্রদায়কে তোষণ করে তাহলে তো অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ইত্যাদি সমস্ত ক্ষেত্রে সেই সম্প্রদায়ের অন্যদের তুলনায় অপেক্ষকৃত উচ্চতর অবস্থানে থাকার কথা। আর আমরা জানি যে ভারতবর্ষে জাতিবর্ণ প্রথার অস্তিত্বের কারনে এই ধরনের সমস্ত সুযোগ ভোগ করে জনগণের একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ তথা উচ্চবর্ণীয় হিন্দুরা। ফলে রাষ্ট্র যদি কোন সম্প্রদায়কে তোষণ করে থাকে তবে তারা এই উচ্চবর্ণীয় হিন্দু সম্প্রদায় এবং হিন্দুত্ববাদীদের মতাদর্শ এই সম্প্রদায়ের স্বার্থে পরিচালিত। যাইহোক ভারতে মুসলিমদের অবস্থা কেমন সেটা জানার জন্য বিচারপতি সাচারের নেতৃত্বে একটি কমিটি তৈরি হয়েছিল। এই কমিটি সারা ভারতবর্ষে অনুসন্ধান চালিয়ে ২০০৬ সালে যে রিপোর্টটি জমা দেয় তা থেকে মুসলিমদের অবস্থার কথা আরও পরিষ্কারভাবে জানা যায়। আমরা সংক্ষেপে সাচার কমিটির রিপোর্ট থেকে মুসলিমদের অবস্থাটা একটু জেনে নিই।

প্রথমে শিক্ষাক্ষেত্রের কথাই বিবেচনা করা যাক। ৬ থেকে ১৪ বছরের মুসলিম শিশুদের ২৫ শতাংশ হয় যায় না বা গেলেও পড়াশুনা ছেড়ে দেয়। ১৯৭০ সাল থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করার ক্ষেত্রে জনগণের অন্যান্য অংশের সাথে মুসলিমদের পার্থক্য ক্রমাগত বেড়ে চলছে। প্রাক স্নাতক ক্ষেত্রে ২৫ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে একজন মুসলিম এবং স্নাতকোত্তর ক্ষেত্রে ৫০ জন ছাত্রছাত্রী প্রতি একজন মুসলিম পাওয়া যায়। মুসলিম স্নাতকদের মধ্যে বেকারির হার সব থেকে বেশি। চাকরির ক্ষেত্রটি বিবেচনা করলে দেখা যায় যে এই.এ.এস. ক্যাডারদের মধ্যে মাত্ৰ ৩ শতাংশ মুসলিম, আই. অফ.এস.ক্যাডারদের ১৮ শতাংশ এবং আই.পি. এস. ক্যাডারদের মাত্ৰ ৪ শতাংশ মুসলিম। ভারতীয় রেল বিভাগে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব মাত্র ৪.৫ শতাংশ। কিন্তু এর মধ্যে অধিকাংশ অর্থাৎ ৯৮.৭ শতাংশ আবার মূলতঃ নিম্নপদে চাকুরিরত। এমন রাজ্য নেই যেখানে সরকারি ক্ষেত্রগুলিতে জনসংখ্যার অনুপাতে মুসলিমদের উপস্থিতি রয়েছে। পুলিশ বিভাগে ৪.৪ শতাংশ এবং পরিবহন বিভাগে ৬.৫ শতাংশ। ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়ার ক্ষেত্রেও মুসলিমরা সবচেয়ে বঞ্চিত। মুসলিম জনগন মোট ব্যাঙ্ক ঋণের মাত্র ৪.৭ শতাংশ পেয়ে থাকে। ব্যাঙ্ক অফিসাররা অনেক মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাকে ‘রেড জোন’ হিসাবে চিহ্নিত করে যার ফলে সেখানকার ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়া কঠিন।

আবার যে পশ্চিমবঙ্গকে অপেক্ষাকৃত প্রগতিশীল রাজ্য বলে গণ্য করা হয় সেখানেও মুসলিমদের অবস্থা সাচার কমিটির রিপোর্ট থেকে বেরিয়ে আসে। পশ্চিমবঙ্গে যেখানে মুসলিম জনসংখ্যা ২৫ শতাংশ এর চেয়েও বেশি সেখানে সরকারি চাকরিতে তাদের প্রতিনিধিত্ব মাত্ৰ ৪.২ শতাংশ। বিচার বিভাগের উঁচু পদগুলিতে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব মাত্ৰ ৫ শতাংশ। বিশেষতঃ কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সহ এই রাজ্যে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে চাকুরিতে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব নেই বললেই চলে। অর্থাৎ প্রতিটি রাজ্যে শিক্ষা ও সরকারি চাকুরিতে মুসলিমদের প্রতিনিধিত্ব তাদের জনসংখ্যার অনুপাতে ভীষণ কম। কিন্তু মজার ব্যাপার হল কোনো কোনো রাজ্যে জেলবন্দিদের মধ্যে মুসলিমদের উপস্থিতি তাদের জনসংখ্যার অনুপাত থেকে বেশি। যেমন মহারাষ্ট্রে মুসলিমরা জনসংখ্যার ১০.৬ শতাংশ হলেও সেখানকার জেলবন্দিদের১৭.৫ শতাংশ মুসলিম। একই ভাবে গুজরাতে মুসলিমরা জনসংখ্যার ৯.০৬ শতাংশ হলেও জেলবন্দিদের ২৫ শতাংশ মুসলিম। এছাড়াও দেশে টাডা,পোটা, ইউ.এ.পি. এ-র মত যেসব কাল আইন লাগু হয়েছে তার শিকার হয়েছে মুসলিম জনগন এবং ভারতবর্ষের বহু মুসলিম বর্তমানে কেবলমাত্র জঙ্গী সন্দেহে বিনা বিচারে জেলে রয়েছে। তাই বলা যায় যে মুসলিমদের তোষণ করা তো দূরের কথা, তারা শিক্ষা, চাকরি, ব্যবসা সমস্ত ক্ষেত্রেই বৈষম্যের শিকার এবং এর সাথে সাথে রাষ্ট্র ও প্রশাসন তাদের সন্দেহের চোখে দেখার ফলে তারা এখানে নূন্যতম গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকারও ভোগ করে না।”

সাম্প্রদায়িক দলের রাজনৈতিক নেতারা যাই বলুক, সরকারি ও বিভিন্ন সংস্থার রিপোর্ট বলছে, এদেশে মুসলিমরা বঞ্চিত। আর এ বঙ্গে মেরুকরণের রাজনীতি করতে যেসব লোক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জামানায় মুসলিম তোষণ হচ্ছে বলে প্রচার করছেন, তারাই আবার ঘরের আলোচনায় বলেন, ‘মুসলিমরা বঞ্চিত’। ভারতেতো বটেই,পশ্চিমবঙ্গেও মুসলিম তোষণ বলে কিছু নেই। অনেক সংখ্যালঘু নেতা ক্ষোভের সুরে বলেন,’হিন্দু তোষণ হচ্ছে আর সেটা ঢাকতেই মুসলিম তোষণের মিথ্যা গল্প ফাঁদা হচ্ছে।’
সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশনের রাজ্য সভাপতি ড: নুরুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন,’এক শ্রেণির রাজনৈতিক দল হিন্দু ভোটকে মেরুকরণ করার উদ্দেশ্যে প্রায়শ মুসলিম তোষণ শব্দটি ব্যবহার করে আসছে। বস্তুত হিন্দু জনগোষ্ঠীকে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করার উদ্দেশ্যে এই শব্দটি তারা প্রয়োগ করে।
সকল সচেতন মানুষ জানেন, সত্য ও সংখ্যা কী বলে। মুসলিম সম্প্রদায় পরিকল্পিত বঞ্চনার শিকার। রাষ্ট্রের কোন বিভাগে তাদের সংখ্যানুপাতে প্রতিনিধিত্ব আছে? মন্ত্রী সভায়? আইন সভায়? বিচার বিভাগে? প্রশাসনের বিভিন্ন বিভাগে? ব্যবসা ও বাণিজ্যে? দেশের সরকারি ও বেসরকারি কোন বিভাগে তাদের সংখ্যানুপাতে প্রতিনিধিত্ব আছে তা দেখে শব্দটির প্রয়োগ হওয়া উচিত। সত্য এই যে, উত্তরোত্তর তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে।
এই অভিযোগের মধ্য দিয়ে তাদের আগ্রাসী মনোভাব প্রকাশ পায়। তাদের অসহনশীল ভাবনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।”

(‘তোষণ’ নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা চলবে)

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর