ঐতিহ্যবাহী কাউলারা পুকুরে টিকিট কেটে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার উৎসব

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG-20201106-WA0012

 

মো. জাকিরুল ইসলাম,

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ধুরাইলের ঐতিহ্যবাহী কাউলারা পুকুরে ভোরের সূর্য উঠতেই পাড়জুড়ে মাছ শিকারীদের ভিড়। ভোর থেকে সন্ধ্যা। তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা। দিনশেষে প্রাপ্তির খাতায় কখনো কখনো থেকে যায় শূন্যই। এতে আছে অতৃপ্তি-হতাশা, তবুও নিরাশ নন কেউই। পূর্ণ উদ্যমে আবারো ধ্যান। ছিপ আর বড়শি দিয়ে মাছ শিকারিদের গল্প এমনই। গভীর জলের মাছ ডাঙায় তুলে আনার প্রতীক্ষার প্রহর কিছুতেই যেন শেষ হতে চায় না। এসব সৌখিন শিকারিরা ৮ হাজার টাকায় টিকিট কিনেছেন।

গত বৃহস্প্রতিবার থেকে শুরু হওয়া এ উৎসব চলছে আগামী কাল পর্যন্ত। ভোর ৫টায় শুরু হওয়া এ মাছ ধরা চলে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত। দীর্ঘ সাধনায় সফলতার মুখও দেখেন কেউ কেউ। ইতোমধ্যে কেউ কেউ কাঙ্ক্ষিত মাছ পেয়ে গেছেন। হাসির ঝিলিক তখন মাছ শিকারিকে ছাপিয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছে আশপাশের দর্শকদেরও।
তবে অনিশ্চিত এ মাছ ধরার খেলায় হতাশও হচ্ছেন অনেকে। দীর্ঘ অপেক্ষায় মিলছে না মাছের দেখা। দিনভর এমন প্রচেষ্টায় কারো ভাগ্যে জোটবে খলই ভর্তি মাছ, আবার কেউবা বাড়ি ফিরবেন শূন্য হাতে। তবে মাছ ধরা পড়ুক আর নাইবা পড়ুক কর্মব্যস্ত নগর জীবনে বিনোদন আর সময় কাটাতে অনেকই করোনাকালে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন কাউলারা দীঘিতে।

বিশাল এ পুকুরের পানিতে সৌখিন মৎস্য শিকারিদের দেখতে চারপাশে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা। পিছিয়ে নেই তরুণরা। কথা হয় ধুরাইল ইউনিয়ন অনার্স স্টুডেন্ট’স এসোসিয়েশন এর সাধারণ সম্পাদক সাব্বির মাহমুদ মুসা এবং সদস্য আলমিন, আলমগীর সহ কয়েকজনের সাথে। তারা জানান ধুরাইল ইউনিয়নে এই পুকুর আমাদের গর্ব। আনন্দ আর বিশাল উদ্যোগী হয়ে দেখতে আসা। শিকারিদের মধ্যে কেউ বড় মাছ পেয়ে খুব খুশি আবার কেউ আশানুপাত মাছ না পেয়ে হতাশ। তবে প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া কম বেশি সবার বড়শিতে ধরা পড়ছে রুই, কাতলা, মৃগেলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
এদিকে মাছ পেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে হালুয়াঘাট উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার সাইফুল ইসলাম বলেন, এ পুকুরটি এ এলাকার প্রায় শত বছরের প্রাচীন পুকুর। ছোট থেকে আমার আলাদা আগ্রহ ছিলো এই মাছ ধরায়। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া হয় মাছ ধরতে তকে এইবারই প্রথম আসা এই পুকুরে। আশানুরুপ মাছ ধরা না পড়লেও আনন্দের কোন কমতি নেই। মাছ পাওয়া না পাওয়া বড় কথা নয়,
মানুষের চিত্তবিনোধন গুলি সুন্দর ভাবে প্রকাশ পাওয়ার জন্য এ ধরণের প্রতিযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ন।

অপর দিকে কথা হয় এই প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করা হালুয়াঘাট উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সাংগঠনিত সম্পাদক আ: ওয়াহাব মাস্টার এর সাথে তিনি জানান, আমরা উপজেলা আওয়ামীলীগের একটি টিম এখানে এসেছি। আমরা আসলে এই এলকার অতিথিপরায়ণে মুগ্ধ। সেই সাথে তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে মাছ ধরতে আসা সকলকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

সরকারী মালিকানা পুকুরটির ইজারাদার রুবেল আহমেদ জানান, ঐতিহ্যবাহী এই পুকুরে স্থানীয় তিনটি সংগঠন ইজারা নিয়েছি। আশেপাশে বিভিন্ন উপজেলার মাছ শিকারীরা এখানে আসে। তাদের সার্বক্ষণিক তদারকি এবং সহযোগিতা করার জন্য ৯ সদস্য বিশিষ্ঠ টিম তৈরি করা হয়েছে।

এছাড়া তিনি এই কাগজের মাধ্যমে কতৃপক্ষের কাছে এই ঐতিহ্যবাহী পুকুরের প্রতিটি পাড় সংস্কার সহ মৎস শিকারী এবং দর্শানার্থীদের জন্য প্রয়োজনীয় শৌচাগার তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ ও সৌন্দর্য বর্ধনে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান।

হালুয়াঘাট উপজেলার ঐতিহ্যবাহী একটি পুকুর ধুরাইল ইউনিয়নের কাউলারা পুকুর। ৭ একর জায়গা জুরে এই পুকুরে প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও বরশি দিয়ে মাছ ধরা প্রতিযোগিতা চলছে। আশা করছি আগামীদিনে হালুয়াঘাটে উন্মুক্ত মাছ চাষের জন্য অভয়ারণ্য হবে এই ঐতিহ্যবাহী পুকুরটি। এমনটি জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ওয়ারিছ উদ্দিন সুমন।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর