“গণতন্ত্রে অল্পসংখ্যক হয়ে জন্মানো ঠিক কত বড়ো অপরাধ?” – সাদিকুল ইসলাম

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

majorityrule

এনবিটিভি ডেস্ক : বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাহীনতা এবং তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং ভাবাবেগে আঘাত হানা হচ্ছে। সোজা কথায় বাংলাদেশে হিন্দুদের টার্গেট করা হচ্ছে, ভারতে মুসলমানদের টার্গেট করা হচ্ছে,আফ্রো-আমেরিকান, এশিয়ান এবং হিস্পানিকরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আক্রান্ত এবং পাকিস্তানে শিয়াদের টার্গেট করা হচ্ছে ইত্যাদি। আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, প্যালেস্টাইন, সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান, ইয়েমেন, মায়ানমার, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, লিবিয়া, সাউথ সুদান, সোমালিয়া, ইন্দোনেশিয়া, তুরস্ক এই সমস্ত দেশে ধর্মীয় বৈষম্যের কারণে গৃহযুদ্ধ চলছে এবং সেটা চক্রবুহ্যের মত। সংখ্যালঘু হয়ে জন্মানোর কারণে অনেক ঝুঁকি থাকে এবং সেটা পৃথিবীর সমস্ত সংখ্যালঘু কেই বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়। সেটা ধর্মীয়, বর্ণ, ভাষা ভেদে সংখ্যালঘু হলেও অত্যাচারের ভাষা একই থাকে।। ধর্মবিদ্বেষী, বর্ণবিদ্বেষী,জাতিবিদ্বেষীদের বর্নমালা এবং সংখ্যাতত্ত্ব একই ধরনের হরফে তৈরী।

 

গত দুই দশক ধরে, সংখ্যাগরিষ্ঠ সম্প্রদায়ের মধ্যে এক ধরনের সার্বজনীন প্রবণতা লক্ষ্য করছি যে সমাজে তাদের নিজের অবস্থা সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা। যেটা সম্পূর্ণভাবে তৈরী করা বা ম্যানুফ্যাকচারড্।
এই মেকি “নেশন বিল্ডিং” একটা তথাকথিত “সুপিরিয়র” জাতির উপর প্রচুর প্রেশার তৈরী করে এবং সেখান থেকেই তৈরি হয় অন্যের উপরে নিজেদের কর্তৃত্ব এবং প্রভুত্ব ফলানোর একক সুপ্রীম বা সুপিরিয়র হিউম্যান হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার জ্বলন্ত স্পৃহা যেটা লেলিহান শিখার চেয়েও ভয়ঙ্কর।

 

এটা শুধূ কোনো বিচ্ছিন্ন বা ধর্মীয় সমস্যা নয়, এটা সংখ্যালঘুদের প্রতি লালিত ঘৃণা এবং অবিশ্বাস, যারা ভিন্ন ভাষায় কথা বলে বা বিভিন্ন জাতিগত-ভাষাগত গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, তাদের প্রতি “বহিরাগত” বা দখলদার হিসেবে মান্য করা। এই ঘৃনা জাতিগত বা ভাষাগত দাঙ্গাকেও উৎসাহিত করে। এক্ষেত্রে ভারত এবং বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়।

 

বাংলাদেশে হিন্দু এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের প্রতি ক্রমবর্ধমান অসহিষ্ণুতার প্রেক্ষাপটে, রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবী এবং দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি স্তরের মানুষদের যে কোনও আকারে অসহিষ্ণুতা এবং বর্ণবাদের বহিঃপ্রকাশ কে যেকোন মূল্যে প্রতিহত করা উচিত। নাহলে, এই প্রবণতা শেষ পর্যন্ত সর্বগ্রাসী শাসন বা ফ্যাসিবাদের দিকে পরিচালিত করবে। শিক্ষিত বাংলাদেশীদের রাজনীতির প্রতি ঘৃণা, তাদের অতৃপ্ত লোভ, এবং রাতারাতি ধনী হওয়ার সুপ্ত ইচ্ছে এবং লুণ্ঠনের প্রবণতা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং সুশাসনের জন্য বড় বাধা। শুধুমাত্র রাজনৈতিক নেতাদের দোষারোপ করার কোন মানে নেই যখন তাদের অনুসারীরাও সমানভাবে দায়ী। জর্জ অরওয়েল বলেছেন, “যে লোকেরা দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদদের নির্বাচন করে তারা খারাপ রাজনীতির “শিকার” নন….. বরং সহযোগী”।

 

বাংলাদেশে জাতিগত-ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে “কাফির বা মালাউন” এর মতো জঘন্য শব্দ বা টার্ম ব্যবহারকে ঘৃণ্য অপরাধ হিসেবে গড়ে তোলার সময় এসেছে। এটি ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের উপর নিপীড়ন অবসানের দিকে একটি সাহসী ও উল্লখযোগ্য পদক্ষেপ হবে, কারণ যে কোন সমাজ যা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে ঘৃণা বা অপরাধের অনুমতি দেয়, সেটা শেষ পর্যন্ত বড় আকারের ধর্মীয় বা জাতিগত দাঙ্গায় পরিনত হয়। জার্মানিতে ইহুদিদের বিরুদ্ধে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আফ্রিকান আমেরিকানদের বিরুদ্ধে নির্বিঘ্নে ঘৃণা-অপরাধের ইতিহাস আমরা জানি। ভারতের সাম্প্রতিক ইতিহাসের ১৯৯২ বাবরি মসজিদ ধ্বংস, ২০০২ এর গুজরাট দাঙ্গা, ২০০৫ এর মৌ এবং লখনৌ দাঙ্গা, ২০১২ আসাম দাঙ্গা, ২০১৩ ক্যানিং এবং মুজফ্ফরনগর দাঙ্গা, ২০১৬ ধুলাগড় এবং ২০১৭ বাদুড়িয়ার দাঙ্গা গুলো দেখলে বোঝা যাবে যে নির্বিঘ্নে ঘৃণা-অপরাধের ( Hate Crime) অবাধ সুযোগ থাকায় মৌলবাদীদের বা সংখ্যাগুরুদের এক অসীম অত্যাচার একটা দূর্বল সংখ্যালঘু সম্প্রদায় কে সহ্য করতে হয়, যেটা খুব ঘৃণ্য ভাবে নর্ম্যালাইজেশন করা হয় বা খুব ছোট্ট ঘটনা হিসেবে দেখানো হয়।

 

তবে একটা স্বস্তির খবর হলো, বাংলাদেশের জেলা প্রশাসন, রাজ্য এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী কথা দিয়েছেন যে কাউকে নিস্তার করা হবে না। কোনো অপরাধী কে ছাড় দেওয়া হবে না।। প্যারামিলিটারি ফোর্স কে প্রথমে ২২ টি এবং পরে ৩৫ টি জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে। ( দ্যা গার্ডিয়ান এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন লিঙ্ক কমেন্ট বক্সে)। রিলিজিয়াস অ্যাফেয়ার্স এবং অন্যান্য মন্ত্রক্ কে দায়িত্ত্ব দেওয়া হয়েছে এই উম্মত্ত জনস্ফালন কে নিয়ন্ত্রণের জন্য এবং তার জন্য শুট আউট এর অর্ডার দেওয়া হয়েছে।

 

পৃথিবীর সমস্ত দূর্বল এবং পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তে সংখ্যালঘুদের উপর অত্যাচার বন্ধ হোক। ধর্মীয় উন্মাদদের আস্ফালন বন্ধ হোক। আমি চাইনা, আমার দেশের গুজরাট, বাবরি, মুজাফফরনগর, নেলি, গোধরা, দিল্লীর প্রতিফলন বাংলাদেশে ঘটুক। আমার দেশের এক নেতা বলেছিলেন ” মেরা গুজরাট জল রাহা হে” এবং বসে বসে গ্ল্যাডিয়েটরের লড়াই দেখছিলেন। আশা করি শেখ হাসিনা নিজেকে এইভাবে চুপচাপ বসিয়ে রাখবেন না।।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর