বঞ্চিত মুর্শিদাবাদ জেলার হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে আমরা সকল জেলাবাসী একযোগে আওয়াজ তুলি: ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

IMG-20210912-WA0028

বহরমপুর, মুর্শিদাবাদ, ১২ই সেপ্টেম্বর,২০২১:

একদা বাংলা-বিহার-ওড়িশার রাজধানী থেকে স্বাধীনোত্তর ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গের একটি অন্যতম বৃহৎ জেলা হিসাবে মুর্শিদাবাদ জেলার আত্মপ্রকাশের পূর্বে ও পরে জেলার ইতিহাসের ছত্রে ছত্রে জড়িয়ে রয়েছে বহু জানা-অজানা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ । ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শাসনের উত্থান-পতনের আগে-পরের পাল, সেন, গুপ্ত যুগ হয়ে মোঘল-সুলতানী যুগের নবাব আর রাজারাজড়াদের বহু উত্থান-পতনের স্বাক্ষর বহনকারী ঐতিহাসিক জেলা মুর্শিদাবাদ । মুর্শিদাবাদ জেলা নিজেই যেন একটা আস্ত ইতিহাস ।

 

ভাগীরথীর তীরে পলাশির প্রান্তরে যুদ্ধের নামে যে বিশ্বাসঘাতকতার নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল তারই পরিণতিতে বাংলার স্বাধীনতা-সূর্য ১৯০ বছরের জন্য অস্তমিত হয়। পরিসমাপ্তিত ঘটে নানান শাসকদের রাজধানী তথা বাংলা-বিহার-ওড়িশার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজদ্দৌলার সাধের রাজধানী মুর্শিদাবাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের । তাই বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল তাঁর “কান্ডারী হুঁশিয়ার” কবিতায় গঙ্গার পাড়ের এই ঐতিহাসিক স্থানকে নিয়ে বিলাপ করেছিলেন, “ঐ গঙ্গায় ডুবিয়াছে হায়, ভারতের দিবাকর!”। কোন প্রেক্ষাপটে এ পরাধীনতা ও পরাজয় নজরুল তাও স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, “কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর,/বাঙালীর খুনে লাল হল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!” ভাগীরথীর তীরেই সেদিন বাঙালির রক্তে ক্লাইভের তরোবারি রঞ্জিত হয়েছিল। সেই সূর্য আবার উদিত হয়েছে আমাদেরি রক্তের বিনিময়ে দুশো বছর পরে। নজরুল তাই বলেন, “উদিবে সে রবি আমাদেরি খুনে রাঙিয়া পূনর্বার”। কিন্তু দূর্ভাগ্যের হলেও সত্য যে, ভারতের স্বাধীনতার পরেও দীর্ঘ প্রায় ৭৫ বছরের রাজনীতির ইতিহাসে বহু রক্তক্ষয় হলেও ১৭৫৭ সালে পলাশীর প্রান্তরে অস্তমিত হওয়া মুর্শিদাবাদ জেলার হৃতগৌরব আর ফিরে আসেনি । বাম-কংগ্রেস হয়ে হালের পরিবর্তনের তৃণমূল সরকারের আমলেও বঞ্চনার ইতিহাস যে দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়েছে একথা আমাদের সবারই জানা। জানে এই বহমান গঙ্গা নদীও। সবই জানা আছে তার, শুধু কথা বলে না। কিন্তু, আজ একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে নবাবের জেলা থেকে কার্যতঃ মুটে-মজুর-কৃষক আর রাজমিস্ত্রীর জেলায় পর্যবসিত মুর্শিদাবাদ জেলার প্রান্তিক মানুষের মাঝে আওয়াজ উঠেছে–“মুর্শিদাবাদের বঞ্চনা, আর না, আর না ।”

মুর্শিদাবাদ জেলার মুটে-মজুর-কৃষক-রাজমিস্ত্রীর সন্তান-সন্ততিরা অধুনা স্পর্ধা দেখিয়েছে দূর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে কিভাবে নির্বিকার রাজ্য সরকারের থেকে উচ্চশিক্ষার পীঠস্থান হিসাবে জেলার জন্য প্ৰথম একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিকে ছিনিয়ে নিতে হয় । কিন্তু, বর্তমানের প্রায় ৮০লক্ষেরও বেশী জনতার এই জেলায় এরকম আরও কয়েকটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মহিলা কলেজ, হাসপাতাল, পর্যাপ্ত প্রাথমিক, উচ্চ-প্রাথমিক, মাধ্যমিক , উচ্চ-মাধ্যমিক স্কুল- মাদ্রাসা, ডিগ্রী কলেজ, কল-কারখানা, আরও আরও কতো কিছুর প্রয়োজন রয়েছে । কিন্তু, এ নিয়ে ভাববার, কথা বলবার রাজনৈতিক নেতৃত্বরা কোথায় ! মীরজাফর, উমিচাঁদ, জগৎশেঠদের মতো বিশ্বাসঘাতকেরা কি তাহলে আজও মুর্শিদাবাদের মাটিতে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ? যদি তা না হয়, তবে সেই ফারাক্কা থেকে ভরতপুর ও অন্যদিকে বড়ঞা থেকে জলঙ্গী অবধি সুবিশাল ভূখণ্ডের মাঝে বসবাসকারী এই সুপ্রাচীন মুর্শিদাবাদ জেলার বিশাল সংখ্যক মানুষের মঙ্গল ও সার্বিক উন্নয়নের কথা ভেবে কেন এখনও পর্যন্ত জেলা বিভাজনের কথা ভাবা হয়নি ? কেন জেলার প্রত্যন্ত ও দূর্গম এলাকার প্রান্তিক মানুষগুলি দিনের পর দিন প্রশাসনিক সুযোগ-সুবিধা ও সার্বিক উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বঞ্চিতই থেকে গেছেন ? বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলেই তো মুর্শিদাবাদ জেলার চেয়ে আয়তনে ও জনঘনত্বে বহুগুন ছোট জেলাকেও উন্নয়নের জিগির তুলে বিভাজন করা হয়েছে । তাহলে, বাস্তবে প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও মুর্শিদাবাদ জেলার সাথে এই দীর্ঘ বঞ্চনা কেন ? মুর্শিদাবাদ জেলার প্রায় ৮০ লক্ষেরও অধিক জনগণের দায়িত্বশীল প্রতিনিধি হিসাবে ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া, মুর্শিদাবাদ জেলা শাখা আজ এই আওয়াজ তুলছে । আমরা চাই, দীর্ঘ দিনের বঞ্চনা ঘুঁচিয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে অবিলম্বে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে জেলা ভাগের উদ্যোগ নেওয়া হোক এবং জেলার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে সম্মান জানিয়ে জেলার প্রতিটি ব্লকের ভৌগোলিক অবস্থার কথা বিচার করে জেলাকে উত্তর ও দক্ষিণে সুষমভাবে বিভাজন করা হোক, যার প্রতিটি ভাগের সাথে “মুর্শিদাবাদ” নামটি যুক্ত থাকুক । আজ থেকে এই দাবীর পক্ষে ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া সমস্ত শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মুর্শিদাবাদ জেলাবাসীকে নিয়ে একযোগে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাবে ।

 

প্রাথমিক পর্যায়ে পার্টির পক্ষ থেকে এই মর্মে খুব শীঘ্রই কোভিড বিধিনিষেধ মেনে বর্তমান জেলা শাসকের নিকট প্রতিনিধিত্বমূলক স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচী পালিত হবে । এরপর, ধাপে ধাপে এই দাবীতে পার্টি তার রাজনৈতিক কর্মসূচী ঘোষণা করবে এবং জেলাব্যাপী লাগাতার দূর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে । আসুন, বঞ্চিত মুর্শিদাবাদ জেলার হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনতে আমরা সকল জেলাবাসী একযোগে আওয়াজ তুলি–“উন্নয়নের ভাবনায়, জেলা বিভাজন চাই।”

শুভেচ্ছান্তে—
মাহফুজুর রহমান
আহ্বায়ক
মুর্শিদাবাদ জেলা বিভাজন কমিটি
ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া, মুর্শিদাবাদ

★ *সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত নেতৃত্ববর্গ:*
১. মাহফুজুর রহমান—আহ্বায়ক, মুর্শিদাবাদ জেলা বিভাজন কমিটি ও রাজ্য
সহ সভাপতি, ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া,পশ্চিমবঙ্গ।
২. আবু তাহের আনসারী—রাজ্য সম্পাদক,ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া,পশ্চিমবঙ্গ।
৩. হামিদ সেখ—- জেলা সভাপতি,ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া,মুর্শিদাবাদ।
৪. তুলসী চরণ মন্ডল–জেলা সহ-সভাপতি, ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া,মুর্শিদাবাদ।
৫. ডাঃ হাবিবুর রহমান—জেলা সম্পাদক, ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া,মুর্শিদাবাদ।
৬. মোঃ খোদা বক্স—জেলা মেন্টর, ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়া,মুর্শিদাবাদ।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর