সভ্যতার চাকা উল্টোদিকে ঘুরিয়ে দেয় সমকাম

NBTV ONLINE DESK

NBTV ONLINE DESK

Frw3FNMacAECLfa

~মুদাসসির নিয়াজ

অতি সম্প্রতি পার্ক সার্কাসের ইন্ডিয়ান সাইন্স কংগ্রেস হলে ঈদ মিলনী বা সম্প্রীতি উৎসবের নামে যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে গেল, সেটা একেবারেই অনভিপ্রেত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত। আয়োজক সংস্থা তিনটি। ওরিয়েন্টাল মিডিয়া ফোরাম, আলিয়া সংস্কৃতি সংসদ ও বেস নামের একটি সংগঠন। সমকামিতার প্রতি বেস এর একাংশের সমর্থন আছে কিনা তা নিয়ে সংশয় তৈরি হওয়া একেবারে অমূলক নয়। তবে অন্য দুটি সংস্থার ক্ষেত্রে সংশয় তৈরি হওয়ার কোনো কারণ দেখছি না।

সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে বিষয়টা খুবই বিতর্কিত হয়ে উঠেছে। কারণ, ইসলাম ও মুসলিম অনুষঙ্গে সমকাম একেবারেই হারাম ও মানবতার পরিপন্থী। পবিত্র জীবন বিধান আল কুরআনে সমকাম এর তীব্র বিরোধিতা উচ্চারিত হয়েছে। লুত আ: এর জাতির প্রতি আল্লাহর লানত, তারা ধ্বংস হয়ে গেছে।

সমকাম নি:সন্দেহে বিকৃত যৌন মানসিকতা। এ বিষয়ে কোনো যুক্তি বা সাফাইয়ের অবকাশ থাকতে পারে না। ইসলাম হল পরিপূর্ন জীবন বিধান। জীবনের প্রতিটা পদক্ষেপ কুরআনে লিপিবদ্ধ ও বিধিবদ্ধ আদেশ নিষেধ মেনে চলতে হয়, এটাই ইসলামের দাবি এবং মুসলমান হওয়ার নিরঙ্কুশ শর্ত। আল্লাহর আইনে যৌনতা পবিত্র এবং বৈধ হয় একমাত্র বিবাহিত দম্পতির জন্য।

বিবাহ বহির্ভূত কোনো সম্পর্ক ইসলামে জায়েজ বা বৈধ নয়। এই সীমারেখা অতিক্রম করার ধৃষ্টতা দেখালে আল্লাহর গযবে নিপতিত হতেই হবে। কোনো ধর্মই সমকাম এর পক্ষপাতী নয়, হতে পারে না। সমকাম প্রকৃতি বিরুদ্ধ, যেটা কখনোই কাম্য নয়। সমাজ বিনির্মাণে অনন্য ভূমিকা রাখা এবং সমাজের অন্যতম চালিকাশক্তি বলে বিবেচিত যুব সমাজকে ধ্বংস করতে সমকাম হল পশ্চিমা ও জায়নবাদীদের আমদানি করা অপসংস্কৃতি।

মুসলিমরা এই গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে যেতে পারে না। যারা সমকামের প্রতি উদার্মনস্ক বা মুক্তমনা, তারা কি ঘুণাক্ষরেও এটা মেনে নেবে যে, তাদের স্ত্রী, পুত্র, কন্যা ইত্যাদি নিকটজন সমকামী হবে। তাই যদি হতো তাহলে তাদের পারিবারিক গঠন, কাঠামো, বন্ধন কেমন হতো? ইসলামের কথা বাদ দিলেও জীব বিজ্ঞান মোতাবেক এই কাম সমীচীন নয়। কারণ, সভ্যতা এগিয়ে চলে নারী পুরুষের পবিত্র বন্ধনের মধ্য দিয়ে। খুলে আম সেই শাশ্বত রীতিবিধির খেলাপ হতে থাকলে পরিবার, সমাজ, দেশ ও সভ্যতা মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য।

শ্রদ্ধেয় সাহিত্যিক ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী ইসমাইল দরবেশ গতকাল এক পোষ্টে ইলেকট্রিকের মেল ফিমেল প্লাগ এর উদাহরণ দিয়ে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিয়েছেন পদার্থ বিজ্ঞানের সেই চিরন্তন ফর্মুলা। যেখানে বলা হয়েছে, সম মেরুতে বিকর্ষণ এবং বিষম মেরুতে আকর্ষণের তত্ব।

আল্লাহ সবকিছুই জোড়ায় জোড়ায় ও পরস্পর বিপরীত মেরুর সৃষ্টি করেছেন। যেমন নারী পুরুষ, দিন রাত্রি, সূর্য চন্দ্র, জোয়ার ভাটা, অমাবস্যা পূর্ণিমা, ইহকাল পরকাল, জান্নাত জাহান্নাম, জায়েজ নাজায়েজ, হারাম হালাল ইত্যাদি প্রভৃতি। চরিত্রগতভাবে বৈপরীত্য থাকলেও এরা একে অন্যের পরিপূরক। একজনের শূন্যস্থান পূরণ করে অন্যজন। একজন আছে বলেই অন্যজনের আদর, কদর হয়।

সমকাম সভ্যতার চাকাকে পিছনে ঘুরিয়ে দেয়। কারণ, এই কামে সম মেরুতে মৈথুনের মাধ্যমে প্রজনন বা বংশ বৃদ্ধি হয় না। ফলে ভবিষ্যত প্রজন্ম বলে আর কিছু থাকে না। জনবিন্যাস থমকে যায়। পারিবারিক বন্ধন অটুট থাকে না। দুজন নারী বা দুজন পুরুষ যদি দম্পতি হয়ে ওঠে, তাহলে কে স্বামী, আর কে স্ত্রী হবে? এতে হয়ত সাময়িক জৈবিক তাড়না বা যৌন ক্ষুধা পিপাসা নিবৃত্তি হতে পারে। কিন্তু পারিবারিক কাঠামো কী হবে? সন্তান কিভাবে পৃথিবীর মুখ দেখবে?

বর্তমান অত্যাধুনিক চিকিৎসার মাধ্যমে সমকামী দম্পতির সন্তান যদিওবা হয়, তাহলে সেই সন্তান কাকে বাবা বলবে, আর কাকে মা বলে ডাকবে? সেই অবোধ ও নিষ্পাপ ফুলের মতো শিশুটি দেখবে তার বাবা ও মা দুজনেই নারী, অথবা দুজনেই পুরুষ। এই রঙ্গ দেখে তো গাধাও হাসবে। তাছাড়া বহু দুরারোগ্য রোগ ব্যাধি ডেকে আনে সমকাম বা সমলিঙ্গ সহবাস। এতে আমাদের সাধের পৃথিবী বেশিদিন বাসযোগ্য থাকতে পারে না। ধ্বংস হয়ে যাবে মানব সভ্যতা ।

মনে রাখতে হবে জন্তু জানোয়াের পশু পাখিরাও সমকামী হয় না। সেখানে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ কিভাবে এহেন পাশবিকতায় লিপ্ত হতে পারে? তাহলে মানুষ কি জন্য পশুদের থেকেও বেশি মাত্রায় জানোয়ার হয়ে যাচ্ছে? এদের বাবা মায়েরাও যদি সমকামী হতো, তাহলে এরা কি আদৌ পৃথিবীর মুখ দেখতে পেত?

আল কুরানের সাত জায়গায় লুত (আঃ) এর কওমের কথা বলা হয়েছে যাদের কে সমকামিতার অপরাধের জন্য আল্লাহ খতম করে দেন। লুত (আঃ) এর কওম বাস করত সোদম ও গোমরাহ নগরীতে। এই সোদম থেকে ইংরেজী সোডোমি শব্দটি এসেছে, যেটা পায়ুকাম বোঝাতে ব্যবহৃত হয়।

ইসলামে সমকাম ব্যভিচারের চেয়েও জঘন্য অন্যায় । হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘যাদেরকে তোমরা লুতের সম্প্রদায়ের কাজে (সমকামে) লিপ্ত দেখবে তাদের উভয়কেই হত্যা করো।’

আলিয়ার মতো ঐতিহ্যবাহী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লাতাত বা সমকামিতাকে প্রমোট বা প্রশ্রয় দিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, তা একেবারেই অনভিপ্রেত। যে বা যারা এর জন্য দায়ী, বা যারা সজ্ঞানে এই নোংরামি আমদানি করে মুসলিম ছাত্র ও যুব সমাজের মেরুদন্ড বা নৈতিক চরিত্র, মূল্যবোধকে কালিমা লিপ্ত করতে চেয়েছে, তাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। তাওবা ইস্তেগফার করে দ্রুত ফিরে আসুন আল্লাহর দিকে, ইসলামের দিকে। পাশবিকতার ধ্বজা ছেড়ে তারা মানুষের কাফেলায় শামিল হোন। আল্লাহ তাদের হেদায়াত করুন।

অনেকের নাম উঠে এসেছে। কে কতখানি দোষী, সেটা আল্লাহ্ই ভালো জানেন। সবটাই সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখছি। অডিও ভিডিও, লেখালিখির ওপর নজর রাখছি। তবে বিষয়টা যেন বেশিদূর না আগায়।

সব শেষে একজনের নাম উল্লেখ না করে পারলাম না, তিনি হলেন তরুণ তুর্কি সাংবাদিক NBTV র সম্পাদক নিজাম পারভেজ। আলিয়া ইউনিভার্সিটির সেই বিতর্কিত ঈদ মিলনই বা সম্প্রীতি উৎসবে উপস্থিত থেকে মেরুদন্ড সোজা রেখে প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়ার জন্য পারভেজ ভাইকে শুকরিয়া, মুবারকবাদ ও কুর্নিশ জানাই। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত করুন, হেফাজত করুন। কালের পবিত্র কলস যেন আর নতুন করে কলুষিত না হয়। আমাদের বোধহয় বোধোদয় হবে।

Facebook Comments Box

সম্পর্কিত পঠিত খবর

সর্বশেষ খবর